বই প্রকাশ করতে গিয়ে প্রতারিত হবেন না!


নতুন লেখকদের স্বপ্ন থাকে তার লেখা একটি বই প্রকাশ করার। অথচ এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক সময় লেখককে প্রতারণার শিকার হতে হয়। কেন লেখকরা প্রতারণার শিকার হন, সে ব্যাপারে জলছবি প্রকাশনের একটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ আজ লেখকদের সামনে তুলে ধরতে চাই।

লেখকরা কেন বিড়ম্বনার শিকার ও কেন তারা প্রতারিত হন, সে ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো। এগুলো যদি সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগ করা যায়, তাহলে আর লেখকরা প্রতারণার শিকার হবেন না।

জেনে নেয়া যাক, নতুন লেখকরা কী-কী কারণে প্রতারণার শিকার হন এবং সেটা কীভাবে এড়ানো যায়। প্রথমে আসে একটি ভালো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা। ভালো একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কখনোই লেখকদের সঙ্গে প্রতারণা করবে না। একটি ভালো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান না হলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই থাকে।


একজন লেখককে যে যে বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে, সেগুলো হচ্ছে :

১. ফেসবুক পেইজ ও ভার্সুয়াল বিজ্ঞাপনে বিমোহিত না হয়ে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব অফিস আছে কিনা সেটা জানা দরকার। প্রকাশনীর নিজস্ব অফিস থাকলে সরাসরি অফিসে গিয়ে প্রকাশকের সঙ্গে বইয়ের ব্যাপারে কথা বলুন। অথবা আপনার কোনো পরিচিত লোক ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বই প্রকাশ করেছে কিনা, করে থাকলে তার সঙ্গে কথা বলে পজেটিভ ধারণা পেলে আপনি আপনার কাজের ৫০% সেরে ফেলেছেন মনে করতে পারবেন।

২. প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইট আছে কিনা, জেনে নিন। সেখানে পরিবেশিত তথ্যগুলো যাচাই করুন। তাদের সম্পাদনা প্যানেল আছে কিনা দেখুন। একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পাদনা বিভাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি। সম্পাাদনা ছাড়া বই প্রকাশ করতে গেলে বইটিতে ভুল থাকার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

৩, ট্রেড লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। এগুলো না থাকলে একুশে বইমেলায় তারা স্টল বরাদ্দ পাবেন না; এমন কি ISBN-ও তারা সংগ্রহ করতে পারবেন না। ISBN ছাড়া বই প্রকাশ করলে সে বইটি বাজারজাত করা যাবে না। বই হিসাবে এটির কোনো মূল্যই নেই।

৪. একুশে বইমেলায় প্রতিষ্ঠানটি স্টল বরাদ্দ পায় কিনা জেনে নিন। বইমেলায় বই প্রদর্শন অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। বইমেলায় গিয়ে তাদের স্টলটি লক্ষ্য করুন। প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পাওয়া ১-২ জন লেখকের সঙ্গে কথা বলুন। তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানুন। প্রকাশনীর বিগত বছরগুলোতে প্রকাশ হওয়া বইগুলোর কোয়ালিটি চেক করুন।


লিংক : www.jchbd.com

৫. প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট ও পেইজগুলো দেখুন, বই নিয়ে তারা কতটা সরব খেয়াল করুন। বই নিয়ে কেমন মার্কেটিং করে তা যাচাই করুন।

৬. রকমারি.কম-সহ অন্যান্য বুকশপে প্রকাশনীর বইগুলো আছে কিনা দেখুন। নিজস্ব ইকমার্স সাইট আছে কিনা, না হলে অনলাইনে বিক্রির কৌশল কী জানুন।

৭. সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে নয়, যেকোনো আর্থিক লেনদেনের ডকুমেন্ট সরবরাহ করে কিনা জানুন; বিশেষ করে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়া টাকা লেনদেন না করাই উত্তম। ব্যাক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা বিকাশ/নগদে টাকা লেনদেন করবেন না।

৮. বই বিক্রির সংখ্যা এবং রয়্যালিটির হিসাব-নিকাশ লেখকদের বুঝিয়ে দেয় কিনা, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন।

৯. লেখক-প্রকাশক চুক্তিপত্র থাকতে হবে। বই প্রকাশের আগে সেটি করে কিনা জানুন।

১০. অনেকে ছাপাখানায় গিয়ে বই প্রকাশ করেন। মনে রাখবেন, ছাপাখানার বই প্রকাশের কোনো এখতিয়ার নেই। তারা বই ছাপতে পারবেন। বই ছাপা ও প্রকাশ করা এক কথা নয়। ছাপাখানায় গিয়ে প্রতারিত হবেন না।

মোটামুটি এই বিষযগুলো সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে পারলে সেটি অবশ্যই একটি ভালো প্রকাশনী। জলছবি প্রকাশন এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। জলছবি প্রকাশন থেকে বই প্রকাশ করে আজ পর্যন্ত কেউ প্রতারিত হননি।

নাসির আহমেদ কাবুল
কবি, কথাসাহিত্যিক
প্রকাশক, জলছবি প্রকাশন
ফোন : ০১৮১৭১২৭৮০৭

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ